সোমবার, ২২ জুন, ২০২০

SADNESS ও DEPRESSION কী? আনিকা তাবাসসুম

SADNESS ও DEPRESSION কী?

শান্তনুর প্রিয় মোবাইলটি দুই দিন হলো হারিয়ে গেছে। আবার কিছু দিন হলো তার কাছের এক বন্ধু মারা গেছেন। সেজন্য শান্তনুর মন অনেক খারাপ এবং খুব কষ্ট পাওয়ার কারণে কান্নাও করছে.....সারাদিন কিছু খাওয়া-দাওয়া করেনি, কথা বলতে ইচ্ছে করছে না কারো সাথে, ঘুম আসছে না, ঠিক মতো ঘুমাতেও পারছে না, মোবাইল হারানোর কষ্টটা ভুলতে পারছে না, আবার বন্ধুর স্মৃতি গুলোও মনে পড়ছে, ইত্যাদি সমস্যা গুলো হচ্ছে।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এটা কি Sadness or Depression ??? পার্থক্য করবেন কিভাবে??
SADNESS :
১. Sadness মানুষের খুব সাধারন একটি আবেগ বা অনুভূতি, যা সবারই হয়।
২. এটা বিশেষ কোনো ঘটনা বা বিষয়কে কেন্দ্র করে হয়।
৩. বেশিদিন স্থায়ী হয় না, সময়ের সাথে ঠিক হয়ে যায়।
৪. মন খারাপ থাকলেও আনন্দের বা পছন্দের ব্যাপার গুলো ভাল লাগে, যেমন: গান শুনলে বা প্রিয় বন্ধুর সাথে আড্ডা দিলে মন কিছুটা হলেও ভালো হয়।
৫. দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে খুব একটা সমস্যা হয়না।
৬. আত্মহত্যার চিন্তা আসে না।
Sadness কোন মানসিক অসুখ নয়। সাধারণত কোন চিকিৎসার দরকার হয় না। তবে এটা যদি বেশি দিন থাকে এবং এর কারণে যদি দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে সমস্যা হয় তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।

DEPRESSION :
১. Depression একটি মানসিক অসুখ।
২. বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো কারণ ছাড়াই হয় । তবে শারীরিক কোন অসুখ বা কষ্টকর কোন লাইফ ইভেন্ট, জেনেটিক ইত্যাদি কারণেও শুরু হতে পারে।
৩. এর লক্ষণ সমূহ : সব সময় মন খারাপ থাকা, কোন কিছু করতে ইচ্ছা করে না বা ভালো লাগেনা, ঘুমের সমস্যা, খাদ্যে অরুচি, ওজনের পরিবর্তন হওয়া, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অতিরিক্ত নেতিবাচক চিন্তা, নিজেকে অকর্মণ্য মনে করা বা অতি মাত্রায় দোষী মনে করা, মনোযোগের অভাব, খুব ক্লান্তি বোধ করা,আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া, আত্মহত্যার চিন্তা বা চেষ্টা করা।
এই লক্ষণগুলোর মধ্যে যেকোনো পাঁচটি বা তার বেশি কমপক্ষে ১৪ দিন বা তার বেশি সময় ধরে থাকে ।
৪. আনন্দের কোন কাজই করতে ভালো লাগেনা বা এর দ্বারা মন ভালো করা সম্ভব হয় না।
৫. দৈনন্দিন কাজ করা , কারো সাথে আড্ডা দেওয়া , পেশাগত কাজ, বাড়ির ভিতরে বা বাইরে সব অবস্থাতেই মন একই রকম থাকে। শান্তি লাগেনা।
৬. অনেক সময় পূর্বে এরকম সমস্যায় ভুগেছেন-এরকম যদি ইতিহাস থাকে।

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়:
১.মেডিসিন
২.সাইকোথেরাপি/cognitive behavior therapy(CBT)
ডিপ্রেশন আপনাকে অসহায় অবস্থায় পতিত করবে। ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন ধরণের থেরাপি ও চিকিৎসার পাশাপাশি নিজেকেও প্রস্তুত করতে হবে। নিজের চেষ্টা না থাকলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া প্রায় অসম্ভব। নিজের প্রতিদিনের কাজকর্ম, খাওয়া-দাওয়া, জীবনযাত্রা এমনকি চিন্তা-ভাবনায় ও পরিবর্তন আনতে হবে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির জন্য।
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির জন্য নিচের পয়েন্টগুলো সহায়ক হতে পারে-
১. রুটিনমাফিক চলা
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিনের জীবনকে একটা রুটিনের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। প্রতিদিনের কাজ-কর্মকে যদি একটা নিয়মের মধ্যে বেঁধে ফেলা যায় তবে তা ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
২. লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা
লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। ডিপ্রেশনে যেহেতু কোন কাজ করতে ইচ্ছা করে না তাই প্রতিদিন একটু একটু করে কাজ করার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে।
ধরা যাক, প্রথম দিন আপনি ঠিক করলেন আপনি আজ একটা মজার কিছু রান্না করবেন। যদি আপনি সেই কাজটা ঠিক মত করতে পারেন তবে পরের দিন আর একটু বেশি কিছু করার কথা চিন্তা করতে হবে। এভাবে ধীরে ধীরে কাজের সাথে সম্পৃক্ততা বাড়াতে পারলে এক সময় ডিপ্রেশন কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
৩. নিয়মিত ব্যায়াম করা
প্রতিদিন অল্প কিছু সময় ব্যায়াম করলে তা আপনার শরীর এবং মনকে সুস্থ রাখবে। ব্যায়াম করা মানে, ম্যারাথন দৌড় টাইপ কিছু না, আপনি যদি প্রতিদিন কিছু সময় হাঁটাহাটি করেন তবুও তা আপনার মস্তিষ্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যা আপনাকে ডিপ্রেশন থেকে মুক্ত হতে সহায়তা করবে।
৪. সুষম খাদ্য গ্রহণ
সুষম খাদ্য গ্রহনের মাধ্যমে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন খাবারে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ থাকে। সাইক্রিয়াটিস্টদের মতে, যেসব খাবারে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এ্যাসিড এবং ফলিক এসিড থাকে সেসব খাবার ডিপ্রেশন কমাতে সহায়তা করে।
৫. অনিদ্রা দূর করা
পর্যাপ্ত ঘুম ডিপ্রেশন কমায়। ডিপ্রেশনের রোগীদের নিদ্রাহীনতা দেখা দেয়। তাই, প্রথমেই ঘুম সমস্যার সমাধান করতে হবে। প্রতিদিনের জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে নিদ্রাহীনতা দূর করা সম্ভব। প্রতিদিন ঠিক সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। দিনের বেলার হালকা ঘুমের অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। শোবার ঘর থেকে টিভি, কম্পিউটার, মোবাইল এগুলো সরিয়ে রাখতে হবে। এভাবেই অনিদ্রা রোগ ধীরে ধীরে দূর করা সম্ভব।
৬. ইতিবাচক চিন্তা করা
ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকলে মানুষের মনে বিভিন্ন রকম নেগেটিভ চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকে। যেমন, আমিই বুঝি সবচেয়ে খারাপ, আমার মত দুঃখ কারো নেই, আমি সবার চেয়ে অসুস্থ, আমি ব্যর্থ একজন মানুষ, আমার দ্বারা কিছু সম্ভব না, আমার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, কী করব জীবনে বেঁচে থেকে- এই ধরণের চিন্তাগুলো সুস্থ হওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা। তাই, এই নেগেটিভ চিন্তাগুলোকে মন থেকে দূর করে পজিটিভলি চিন্তা করার চেষ্টা করতে হবে। যুক্তি দিয়ে সবকিছু বিচার করতে হবে। কোনোভাবেই আশাহত হওয়া যাবে না।
৭. আনন্দদায়ক কাজের মধ্যে সময় কাটানো
নতুন কিছু করার চেষ্টা করতে হবে। মজার কোন কাজ। যেমন, নতুন কোথাও ঘুরতে যাওয়া, মজার কোন বই পড়া, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া। মন ভালো রাখার সবরকম চেষ্টা করতে হবে। মন ভালো থাকলে ডিপ্রেশন কেটে যাবে একসময়।
৮. Psychiatrist ও সাইকোলজিস্টের পরামর্শ গ্রহণ

ডিপ্রেশন পুরোপুরি ভালো না হওয়া পর্যন্ত পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।
সর্বশেষ শুধু এইটুকু বলতে চাই,Depression অনেকদিন ধরে স্থায়ী হয়। সুস্থ হতে হলে অবশ্যই সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয় (যেমন: ওষুধ, কাউন্সিলিং বা সাইকোথেরাপি ইত্যাদি) এবং সময়েরও।
লেখক: আনিকা তাবাসসুম, বিএসসি অনার্স (মনোবিজ্ঞান তৃতীয় বর্ষ)


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

SADNESS ও DEPRESSION কী? আনিকা তাবাসসুম

SADNESS ও DEPRESSION কী? শান্তনুর প্রিয় মোবাইলটি দুই দিন হলো হারিয়ে গেছে। আবার কিছু দিন হলো তার কাছের এক বন্ধু মারা গেছেন। সেজন্য শান্তনুর...